শুরুর ধাক্কা সামলিয়ে তামিম-সাব্বির জুটিতে টাইগারদের শতরান পার
স্পোর্টস আপডেট ডেস্ক:
২৭১ রানের লক্ষ্য। বিদেশের মাটিতে প্রথমবার নিউজিল্যান্ডকে হারানোর দারুণ
সুযোগ। সেই সাথে আছে আরো কিছু হিসেব নিকেশ। তো এমন ম্যাচে বাংলাদেশের
ব্যাটিং ইনিংসটা শুরু হলো মিশ্র এক অনুভূতি দিয়ে। স্পিনার জিতান প্যাটেলকে
ইনিংসের প্রথম বলেই ছক্কা হাঁকিয়ে দিলেন তামিম ইকবাল। তৃতীয় বলে মারতে গিয়ে
গোল্ডেন ডাক ইনফর্ম সৌম্য সরকারের! ওই ধাক্কা বেশ সাবলীলভাবেই সামলে
নিয়েছেন অভিজ্ঞ ওপেনার তামিম ইকবাল ও হার্ড হিটার ব্যাটসম্যান সাব্বির
হোসেন।
এই প্রতিবেদন লেখার সময় ডাবলিনে
ত্রিদেশীয় সিরিজের শেষ ম্যাচে শতরান পেরিয়েছে মাশরাফির দল। ১৯ ওভারে ১
উইকেটেই ১০২ রান তাদের। তামিম ৫১ ও সাব্বির ৪০ রানে ব্যাট করছেন।
এর
আগে নিউজিল্যান্ডকে ৮ উইকেটে ২৭০ রানে আটকে দিয়েছেন বাংলাদেশের বোলাররা।
যদিও আনুষ্ঠানিকতার ম্যাচ। তারপরও বাংলাদেশের সামনে প্রথমবার কিউইদের
বিদেশের মাটিতে হারানোর প্রেরণা তো আছেই। এর আগে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে
বাংলাদেশ যে ৮টি ম্যাচ জিতেছে তার প্রত্যেকটি ঘরের মাঠে।
২৮
বছরের বাঁহাতি ড্যাশিং ওপেনার তামিম আগের তিন ম্যাচে একটি অপরাজিত ফিফটি ও
আরেকটি ফিফটির কাছাকাছি ইনিংস খেলেছেন। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এই সিরিজের
ম্যাচে করেছিলেন ২৭। এবার জেতার মতো এই ম্যাচে দায়িত্ব নিয়েই ব্যাট করছেন
তামিম। তুলে নিয়েছেন ক্যারিয়ারের ৩৬তম ফিফটি। সাব্বিরও ফর্মহীনতা কাটিয়ে
ফিফটির দিকে এগিয়ে গেছেন। তামিমকে দারুণ সঙ্গ দিয়ে তাল রেখেই ব্যাট
করছিলেন।
এই ম্যাচেই বল হাতে একটা সময়
প্রবল হতাশায় পুড়তে হয়েছে বাংলাদেশ দলকে। ২৪.৩ ওভার উইকেটের দেখাই পায়নি।
প্রথমবার ত্রিদেশীয় সিরিজে খেলতে নেমে সহজ ক্যাচ ছেড়ে ভিলেন হয়ে যাচ্ছিলেন
নাসির হোসেন। সেই নাসিরই আবার বল হাতে ম্যাচে ফেরান বাংলাদেশকে। আগে পরে
ক্যাচ পড়ে আরো। নাসিরের আঘাতের পর বোলাররা আরে চেপে ধরেন প্রতিপক্ষকে।
সাকিব আল হাসান ও মাশরাফি বিন মুর্তজা এরপর স্লগ ওভারের ঠিক আগে ও শুরুতে
৪টি উইকেট তুলে নিলেন দ্রুত। বুধবার নিউজিল্যান্ডের বিশাল স্কোর গড়ার
সম্ভাবনাকে ওখানে মাটি দেন টাইগার বোলাররা। এরপরও লড়ে ফিফটি তুলে নেন
অভিজ্ঞ রস টেলর। আর শেষ পর্যন্ত ডাবলিনে নিউজিল্যান্ড ২৭১ রানের যে টার্গেট
ছুড়ে দিল তা বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের জন্য জয় করার মতোই। নির্ধারিত ৫০
ওভারে ৮ উইকেটে ২৭০ রান তুলেছে কিউইরা।
এই
নিউজিল্যান্ডকে আগে ৮ বার হারিয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু সব জয় টাইগারদের
দেশের মাটিতে। গেল নিউজিল্যান্ড সফর থেকে কেবল হার। ক্লনটার্ফ ক্রিকেট
ক্লাব মাঠে সিরিজের শেষ ম্যাচের আগে ডাবলিনে নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরেছে
টাইগাররা। তাই নিউজিল্যান্ড এখানে চ্যাম্পিয়ন, বাংলাদেশ রানার্স আপ।
আয়ারল্যান্ড যেখানে তিন দলের মধ্যে তৃতীয়।
জয়ের
প্রবল বাসনা নিয়ে প্রতিপক্ষকে ব্যাট করতে পাঠালেন মাশরাফি। কিন্তু ম্যাচের
চতুর্থ বলেই বিপত্তি। টম ল্যাথাম আগের ম্যাচে সেঞ্চুরির পর বলেছিলেন
বাংলাদেশকেও দেখে নেবেন। কিন্তু ব্যক্তিগত ও দলের ১ রানের মাথায় ক্যাচ
তুললেন তিনি। সহজ ক্যাচটি ছেড়ে টাইগারদের হতাশ করলেন নাসির।
আগের
ম্যাচের ৪ উইকেট শিকারী মোস্তাফিজুর রহমান অবশ্য তেতেই ছিলেন। নিজের
দ্বিতীয় ও ম্যাচের চতুর্থ ওভারে ল্যাথামের পার্টনার লুক রনকিকে (২) ফিরিয়ে
দিলেন সাকিবের ক্যাচ বানিয়ে। মনে হলো, আরো আঘাত হানবে টাইগাররা। কিন্তু
ল্যাথাম ও নেল ব্রুম মিলে ১৩৩ রানের জুটি গড়ে তুললেন দ্বিতীয় উইকেটে।
দুজনারই ফিফটি হলো। টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরির পথে তখন ল্যাথাম।
এমন
সময় নাসির প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ পেলেন। মাশরাফি নাসিরের বলে নিলেন
ব্রুমের (৬৩) ক্যাচ। ঠিক পরের ওভারে ফিরেই আবার প্রথম বলে উইকেট নাসিরের।
এবার আরো বড় শিকার। যার ক্যাচ ফেলেছিলেন শুরুতে সেই ল্যাথামকে (৮৪)
সেঞ্চুরিবঞ্চিত করে ফেরালেন নাসির।
নাসিরের
জোড়া আঘাতই খুব কাজে আসে। ১ উইকেটে ১৫৬ থেকে নাসিরের আঘাতে ৩ উইকেটে ১৬৭
রানের দল নিউজিল্যান্ড। সেট হয়ে যাওয়া দুই ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে একটু চাপে
তখন নিউজিল্যান্ড। বাংলাদেশের বোলাররা চাপ বাড়িয়ে রান রেট কমান। তবে এর
মাঝে সেট হয়ে যেতে থাকেন অভিজ্ঞ রস টেলর ও মারকুটে কোরি অ্যান্ডারসন।
কিন্তু ৩৯তম ওভারে সাকিব ম্যাচে তার প্রথম উইকেটের দেখা পান। তিনি ফিরিয়ে
দেন ২৪ রান করা অ্যান্ডারসনকে। এরপর নতুন ব্যাটসম্যান জিমি নিশাম (৬)
মাশরাফির প্রথম শিকার।
মাশরাফি ৪২তম
ওভারে ওই উইকেট নিলেন। পরের দুই ওভারে সাকিব ও মাশরাফি তুলে নেন আরো ২
উইকেট। মিচেল স্যান্টনার (০) সাকিবের বলে বোল্ড। ৪৪তম ওভারে মাশরাফির বলে
বিপজ্জনক কলিন মুনরো (১) উইকেটের পেছনে মুশফিকুর রহীমকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন।
বড় রানের দিকে ছুটে চলা নিউজিল্যান্ড ২২৬ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে তখন প্রবল
চাপে। টেলর ৬০ রানে অপরাজিত থাকেন ঠিকই কিন্তু শেষে রুবেল হোসেনও ১ উইকেট
পান। সব মিলিয়ে ৩০০ করতে না পারার হতাশা নিয়ে শেষ হয় কিউইদের ইনিংস। এখন
প্রশ্ন, এই রান টপকে যেতে পারবেন তো বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা?
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
নিউজিল্যান্ড : ২৭০/৮ (ল্যাথাম ৮৪, ব্রুম ৬৩, টেলর ৬০*, অ্যান্ডারসন ২৪, প্যাটেল ৭*, নিশাম ৬, হেনরি ৫, রনকি ২, মুনরো ১, সান্টনার ০; সাকিব ২/৪১, নাসির ২/৪৭, মাশরাফি ২/৫২, মোস্তাফিজ ১/৪৬, রুবেল ১/৫৬, মোসাদ্দেক ০/১৪)।
নিউজিল্যান্ড : ২৭০/৮ (ল্যাথাম ৮৪, ব্রুম ৬৩, টেলর ৬০*, অ্যান্ডারসন ২৪, প্যাটেল ৭*, নিশাম ৬, হেনরি ৫, রনকি ২, মুনরো ১, সান্টনার ০; সাকিব ২/৪১, নাসির ২/৪৭, মাশরাফি ২/৫২, মোস্তাফিজ ১/৪৬, রুবেল ১/৫৬, মোসাদ্দেক ০/১৪)।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন